১৪ বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কার করল আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ১১:২৪ এএম, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২১
  • শেয়ার করুন

উন্নয়ন নিয়ে বড় গলায় কিছু বলা যাচ্ছে না। বিদ্রোহী প্রার্থীকে নিয়ে দুশ্চিন্তা। মূল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর দলীয় ‘ভোটব্যাংক’ নিয়েও আছে আলোচনা। সব মিলিয়ে পৌর নির্বাচনে মেয়র পদের ভোট নিয়ে ‘বেসামাল’ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগ।

এ অবস্থায় দলটি ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ ও তাঁর ১৩ সমর্থককে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। দলীয় প্রার্থীর ব্যক্তিগত ইমেজের সঙ্গে অন্য প্রার্থীদের তুলনা করে ভোট চাওয়া হচ্ছে। সরকার দলীয় প্রার্থী হওয়ায় নানা সুবিধার কথাও বলে বেড়িয়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার নির্বাচন। মেয়র পদে ছয়জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান মেয়র নায়ার কবির ও বিএনপি থেকে মো. জহিরুল হক খোকন লড়াই করছেন। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. মাহমুদুল হক ভূঁইয়া। মূলত ওই তিন প্রার্থীর মধ্যেই লড়াই হবে বলে ধারণা পাওয়া গেছে।

দলীয় সূত্র জানায়, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রবিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি ও সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকার বহিষ্কার সংক্রান্ত একটি জরুরি চিঠি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদের বরাবর পাঠান।

চিঠিতে বলা হয়, পৌরসভা নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নায়ার কবীরের মনোনয়ন ‘প্রত্যাখ্যান’ করে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগ কার্যকরী সদস্য মাহমুদুল ভূঞা এবং তাঁর সমর্থনে জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক আলী আকবর, উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য আজিজুর রহমান বাচ্চু, জেলা কৃষক লীগ সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন দুলাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা আবু সিদ্দিক, মো. শাহজাহান মিয়া, জেলা কৃষক লীগ সহ-সভাপতি জাকির হোসেন, প্রচার সম্পাদক সারোয়ার আলম, সদস্য আবুল কালাম, জেলা যুবলীগের সহ-প্রচার সম্পাদক শেখ শওকত হোসেন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা পান্না, যুবলীগ নেতা আল-আমিন দুলাল, গাজিউর রহমান ও আমিনুল ইসলাম মঞ্জু নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ করে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সকল পদ থেকে তাদেরকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষা বৃহত্তর প্রয়োজনে তাদেরকে একই সঙ্গে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটিকে অনুরোধ করা হলো। চিঠিটি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের কাছে সরবরাহ করা হয়।

একাধিক সূত্র জানা গেছে, বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুল হক ভূঁইয়া পারিবারিক সূত্রে পৌর এলাকার ভাদুঘরের ও বর্তমান অবস্থান সূত্রে কাজীপাড়ার বাসিন্দা হওয়ায় ওই এলাকার ভোট নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আওয়ামী লীগ। মূলত দু’টি এলাকাই আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক। কিন্তু এলাকার বাসিন্দা হিসেবে এসব ভোটের বেশিরভাগই পড়তে পারে মাহমুদের পক্ষে। এছাড়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিসেবে পুরো পৌর এলাকা জুড়েই মাহমুদুল হকের নিজস্ব কিছু বলয় রয়েছে। যে কারণে বিদ্রোহী প্রার্থীর গ্যাঁড়াকলে পড়ে বিএনপি প্রার্থী পার পেয়ে যান কি-না সেই দুশ্চিন্তাতেই আছে আওয়ামী লীগ।

এদিকে বর্তমান মেয়রের আমলে খুব একটা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড না হওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রচারণায় এ বিষয়ে জোর দিয়ে কিছু বলাও যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বর্তমান মেয়রের ব্যক্তিগত ইমেজকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্তমান মেয়রের আমলে পৌরসভার উন্নয়ন কাজে টেন্ডারবাজি, ভূমিদস্যুদের তৎপরতা একেবারে কমে আসা, স্কুলের খেলার মাঠ থেকে সরিয়ে মূল পৌর এলাকার বাইরে গরুর বাজার নিয়ে পৌরসভার সৌন্দর্য্য রক্ষা ও আয় বাড়ানো, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচলে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসা, টাউন খাল উদ্ধারে কিছু ভূমিকা নেয়াসহ উল্লেখযোগ্য কিছু উদ্যোগের কথা প্রচার করা হচ্ছে।

এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হয়েও দলীয় রাজনীতিতে কোনো ধরনের বলয় সৃষ্টি না করা কিংবা দলীয় শৃংখলা মেনে কাজ করার বিষয়টিও ভোটারদের মাঝে তুলে ধরা হচ্ছে। পৌর এলাকার আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি ভালো রাখতে মেয়রের ভূমিকার কথাও ভোটারদেরকে বলা হচ্ছে। পাশাপাশি আকারে ইঙ্গিতে বিএনপি প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর অতীত আর বর্তমান কর্মকাণ্ডের বিষয়েও ভোটারদেকে অবহিত করা হচ্ছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলোচনায় বলেন, ‘প্রত্যেক পৌরসভাতেই একবার পাঁচ বছর ব্যাপক উন্নয়ন হলে পরের পাঁচ বছর হয় না। যে কারণে বর্তমান মেয়রের আমলে হয়তো বড় ধরনের উন্নয়ন দৃশ্যমান নয়। তবে একেবারে উন্নয়ন হয়নি সেটা বলা যাবে না। উন্নয়নের জন্য ওনি সাধ্যমতো চেষ্টা করে গেছেন। ওনি মেয়র থাকাকালে পৌর এলাকার মানুষ অনেক শান্তিতে ছিল। দলীয় কিংবা ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে তিনি কিছু করেছেন সেটা কেউ বলতে পারবে না। এবার নির্বাচিত হলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই তিনি অনেক উন্নয়ন কাজ করতে পারবেন।’



সর্বশেষ খবর